ফাইভার কী? যেভাবে ফাইভারের মাধ্যমে অনলাইনে আয় করবেন!
ফাইভার হল বিভিন্ন ডিজিটাল সেবার অন্যতম বৃহত্তম ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস। ফাইভার প্ল্যাটফর্মে প্রত্যেকটা ডিজিটাল সেবার জন্য অগণিত ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন, যার মধ্য থেকে গ্রাহকগণ তাদের পছন্দেরজনকে খুঁজে নেন। ফাইভার এর যেকোনো সেবার অফারকে গিগ বলা হয়। মাত্র ৫ ডলারেও বিভিন্ন সেবা পাওয়া যায় ফাইভার এ। এজন্যই এর নামের সাথে ফাইভ কথাটি যুক্ত আছে। যদিও এর চেয়ে অনেক বেশি দামে সেবা পাওয়া যায় ফাইভারে।
ফ্রিল্যান্সিং হলো বর্তমান প্রজন্মের একটা বড় অংশের দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ফ্রিল্যান্সিং এর জনপ্রিয়তা, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রতিযোগিতার ব্যাপকতা। ইন্টারনেটে অসংখ্য ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস রয়েছে, যার মধ্যে ফাইভার একটি বহুল জনপ্রিয় নাম। ফাইভার কীভাবে কাজ করে এবং ফাইভার এ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সফলতা অর্জন করার উপায় হচ্ছে এই পোস্টের আলোচ্য বিষয়।
ফাইভার কী? যেভাবে ফাইভারের মাধ্যমে অনলাইনে আয় করবেন!
ফাইভার কীভাবে কাজ করে?
আপনি ফ্রিল্যান্সার হোন কিংবা বায়ার (গ্রাহক), ফাইভারে সেলিং বা বায়িং এর ক্ষেত্রে একাউন্ট থাকা আবশ্যক। ফ্রিল্যান্সারগণ তাদের সেবার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ সম্বলিত গিগ পোস্ট করেন। গ্রাহকগণ সেখান থেকে তাদের পছন্দনীয় গিগটি বেছে নেন। কখনো শুধু সার্চ করে, কখনওবা প্রজেক্ট পোস্ট করে ফ্রিল্যান্সার খুঁজে নেন বায়াররা।
অর্ডার প্লেস হলে গিগ এর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ গ্রাহকের একাউন্ট থেকে কেটে নেয়া হয় এবং ফ্রিল্যান্সার এর একাউন্টে জমার জন্য অপেক্ষমাণ থাকে। প্রতি ৪০ ডলার মূল্য অপেক্ষা কম অর্ডারের জন্য ২ ডলার এবং ৪০ ডলার মূল্য অপেক্ষা বেশি হলে মূল অর্থ এর ৫ শতাংশ ফাইভার কেটে নেয়। অর্ডার বায়ার কর্তৃক কমপ্লিট হলে ফাইভার ফ্রিল্যান্সার সেই মূল অর্থের ৮০% পেয়ে যান। বাকিটা ফাইভার সার্ভিস চার্জ হিসেবে কেটে রাখে।
উল্লেখ্য, এই চার্জের পরিমাণ সময়ের সাথে কম-বেশি হতে পারে। তবে মূলনীতি এরকমই।
ফাইভারে কী কাজ করবেন?
ফাইভারে আপনি ইন্টারনেটভিত্তিক যেকোনো ধরনের সেবা প্রদান করতে পারেন। ধরুন আপনি ভালো লিখতে পারেন, সেক্ষেত্রে কন্টেন্ট রাইটিং এর কাজ করতে পারেন। কিংবা আপনি গান তৈরী করতে পারেন, সেক্ষেত্রে আপনি মিউজিক প্রডিউসিং এর কাজ করতে পারেন। অর্থাৎ আপনার যে ধরনের কাজেই দক্ষতা থাকুক না কেনো, ফাইভার এ আপনি কাজ করতে পারবেন। ফাইভার এর সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজগুলো হল –
- কন্টেন্ট রাইটিং
- গ্রাফিক ডিজাইনিং
- ভিডিও এডিটিং
- প্রুফরিডিং
- ভয়েস-ওভার
- সফটওয়্যার বা ওয়েব ডেভেপমেন্ট
- ওয়েবসাইট ডিজাইনিং
- ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট, ইত্যাদি।
কীভাবে সফল ফাইভার গিগ তৈরী করবেন?
প্রথমে ফাইভার একাউন্ট তৈরি করে নিজের প্রোফাইল নির্মাণ করুন। এরপর গিগ তৈরি করুন।
যেহেতু ফাইভার গিগ সিস্টেমের উপর কাজ করে, তাই ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কার্যকরী গিগ তৈরী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফাইভার গিগ তৈরি করার সময় একজন ফ্রিল্যান্সারের যে বিষয়গুলি মাথায় রাখা দরকার-
- আপনার সেবার সাথে মানানসই সঠিক ক্যাটাগরি ও সাব-ক্যাটাগরি এবং ট্যাগ নির্বাচন করুন। বায়াররা তাদের কাজের প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সার খুঁজতে ক্যাটাগরি মেন্যু এবং ট্যাগ অধিক ব্যবহার করেন। তাই আপনার সেবার সাথে মিলিয়ে সঠিক ক্যাটাগরি ও সাব-ক্যাটাগরি নির্বাচন করা একান্ত জরুরি।
- আপনার অফার করা সেবার সাবক্যাটেগরিতে কেমন প্রতিযোগিতা বিদ্যমান, তা বিশ্লেষণ করুন। ইতোমধ্যেই যে গিগগুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে সেগুলো দেখুন এবং জানার চেষ্টা করুন যে সাবক্যাটেগরিতে আপনি গিগ পোস্ট করবেন, তাতে কী কী তথ্য যোগ করা প্রয়োজন।
- যেহেতু ফাইভার একটি প্রতিযোগিতামূলক মার্কেটপ্লেস, তাই আপনার গিগ এর টাইটেলটি হওয়া চাই ৮০ ক্যারেক্টার এর মধ্যে সবচেয়ে সেরা টাইটেল। আপনার কাজে নিজস্বতা কী আছে তা তুলে ধরুন। টাইটেলে ইমোশন যোগ করতে বিশেষণ ব্যবহার করুন। এছাড়াও আপনি কত দ্রুত কাজ সম্পন্ন করেন, তাও যোগ করতে পারেন।
- ফাইভার এ একই গিগ এর জন্য একাধিক প্যাকেজ তৈরী করা যায়। এর যথাযথ ব্যবহার আপনাকে অপেক্ষাকৃত অধিক কাস্টমার পেতে সাহায্য করবে।
- গ্রাহকগণ আপনার গিগ দেখেই আপনাকে কাজটি দিবে কিনা তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। গিগ এর মধ্যে আপনার সাথে কাজ করার সুবিধা, আপনিই কেনো কাজটির জন্য যথাযোগ্য লোক, তা তুলে ধরুন। এছাড়াও আপনার সোশ্যাল মিডিয়া লিংকগুলো গিগ এ যুক্ত করতে পারেন, যাতে প্রয়োজনে গ্রাহক আপনার সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করতে পারে। যদিও ফাইভার প্ল্যাটফর্মের বাইরে গিগের অর্থ আদানপ্রদান করলে সেটা যদি ফাইভার জানতে পারে তাহলে আপনার একাউন্ট ব্লক করে দিতে পারে।
- আপনার গিগ এ গিগ এর সেবা সম্পর্কিত ছবি, ভিডিও – এসব যুক্ত করুন। এর ফলে আপনার কাজের সম্পর্কে গ্রাহকগণ বিস্তারিত ধারণা পাবেন।
- আপনার গিগ এর লিংক সোস্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। ফাইভার এর মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। অ্যাপ এর মাধ্যমে গিগ হোয়াটসঅ্যাপ এর মত মেসেজিং অ্যাপে সহজেই শেয়ার করা সম্ভব। এছাড়াও কোরাতে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে আপনার সেবা সম্পর্কে ছোট করে কয়েকলাইন লিখে মানুষকে জানিয়ে দিতে পারেন।
ফাইভার সেলার লেভেল
গ্রাহক সন্তুষ্টি, সময়মত ডেলিভারি এবং হাই-কোয়ালিটি সেবার উপর নির্ভর করে ফাইভারে ফ্রিল্যান্সারদের সেলার লেভেল প্রদান করা হয়। প্রতিটা সেলার লেভেল ফাইভারে আলাদা স্ট্যাটাস ও পরিষেবা অর্জনে সহায়ক। প্রতি মাসে ফাইভারে আপনার কাজের বিবরণ অনু্যায়ী সেলার লেভেল আপগ্রেড হতে পারে। ফাইভারে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সেলার লেভেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করর।
ফাইভার প্রোফাইলের মাধ্যমে কাজ পাওয়া যায় কি?
হ্যাঁ! ফাইভার প্রোফাইলের মাধ্যমে কাজ পাওয়া যায়। আপনি যদি একজন সেলার হন, তবে আপনার সেলার লেভেল, কাজের অভিজ্ঞতা, রেটিংস – এসব দেখে গ্রাহকগণ তাদের কাজের জন্য আপনার উপর ভরসা করবে। সুতরাং, প্রোফাইলকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাও ফাইভারে সফল হওয়ার একটি ধাপ।
ক্লায়েন্টকে কীভাবে খুশি রাখবেন?
সেলার এবং ক্লায়েন্ট – এই দুটিই হল ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোর মূল চালিকাশক্তি। এজন্য ক্লায়েন্ট এর ইচ্ছা ও মতামতকে গুরুত্বের চোখে দেখা একজন সেলার এর নৈতিক দায়িত্ব। ক্লায়েন্টকে খুশি রাখতে একজন সেলার এর যেসব ব্যাপার লক্ষ রাখা জরুরি –
- ক্লায়েন্ট এর সাথে ভদ্র ব্যবহার করা।
- সময়ের মধ্যে সব মেসেজের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা।
- মাঝেমধ্যে ক্লায়েন্ট কোনো ব্যাপারে ভুল বুঝে বা বুঝতে পারেনা। সেসব ক্ষেত্রে সংকোচ না করে যথাশীঘ্রই ব্যাপারগুলি বুঝিয়ে দেয়া।
- অধিকাংশ ক্লায়েন্টই ফাইভার এর টার্মস অফ সার্ভিসগুলোকে গুরুত্বের চোখে দেখে। সুতরাং, সেগুলো মেনে চলা একজন সেলার এর একান্ত দায়িত্ব।
ফাইভার এবং ভবিষ্যৎ
কোনো ফ্রিল্যান্সার যখন কোনো অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করা শুরু করে, প্রথমদিকে কাজ পাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠে। তবে এই প্রক্রিয়া একবার শুরু হলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়না। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য ফাইভারকে বেছে নিয়ে থাকেন, তবে হাতে সময় নিয়ে উপরোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। ফ্রিল্যান্সিং জগতে সফলতা পাওয়া সময়ের ব্যাপার। সুতরাং, ধৈর্য্যহারা না হয়ে আপনার লক্ষ্যে অটল থাকুন। সময়ের সাথে সাথে সফলতা আসবেই।